নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা পার্টির’ ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক

টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড়সড় এক পালাবদলের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধের পর মাস্ক ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

গত বছর ট্রাম্পকে জোরালোভাবে সমর্থন করলেও এবার মাস্ক তাঁর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। গত মার্কিন নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পপন্থী একটি রাজনৈতিক গ্রুপ গঠন ও তাতে ২৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছিলেন। এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প তাঁকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’ (ডজ) এর সহ-প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। বিশেষ এই বিভাগের কাজ ছিল, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অকার্যকর ব্যয় কমানো এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটানো।

কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে এই সবকিছু থেকে সরে এসেছেন ইলন মাস্ক। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মাস্ক তাঁর এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ২২ কোটি অনুসারীর মধ্যে একটি জরিপ চালান। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন—‘আমেরিকায় কি এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার সময় এসেছে যা আসলে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা ৮০ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে?’

এই জরিপে ৫৬ লাখের বেশি সাড়া পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই মাস্কের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন। মাস্ক পরে আরেক পোস্টে বলেন, ‘মানুষ তাদের মতামত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন।’ এ সময় তিনি দলের নাম প্রস্তাব করেন ‘আমেরিকা পার্টি’।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ট্রাম্পের ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের কর ও ব্যয় বিলকে ‘জঘন্য ও বেহায়াপনা’ বলে সমালোচনা করেন মাস্ক। এর ফলে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জবাবে ট্রাম্প হুমকি দেন, স্পেসএক্স ও টেসলাসহ মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সব ধরনের ফেডারেল চুক্তি বাতিল করে দেবেন।

এই বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। মাস্ক সেখানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জেফরি অ্যাপস্টেইনের কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনেন এবং তাঁর অভিশংসনের দাবিও জানান। অ্যাপস্টেইন ছিলেন এক বিতর্কিত অর্থলোভী ব্যক্তি এবং শিশু পাচারের অভিযোগে দণ্ডিত। ২০১৯ সালে কারাগারে রহস্যজনকভাবে তাঁর মৃত্যু হয়।

এই বিরোধ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন মাস্ক রাজনৈতিকভাবে নতুন দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ বলেছেন, ‘এই দুটি বিশাল ইগো একসঙ্গে থাকার জন্য জন্মায়নি। এই বিচ্ছেদ বহু আগেই হওয়া উচিত ছিল।’

জানা গেছে, ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে বিরোধের প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারেও। বিরোধ প্রকাশ্য হওয়ার পর টেসলার শেয়ার ১৪ শতাংশ এবং ট্রাম্প মিডিয়ার শেয়ার ৮ শতাংশ পড়ে যায় বলে খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে শেয়ার পড়ে যাওয়ার পরদিনই কোম্পানিগুলো কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের দ্বন্দ্ব নিয়ে রসিকতা করেছেন, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে ‘শান্তিচুক্তি’ করিয়ে দিতে প্রস্তুত। এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ডি এবং ই–এর মধ্যে শান্তি চুক্তির জন্য আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত। পারিশ্রমিক হিসেবে স্টারলিঙ্কের শেয়ার নিলেই চলবে। মারামারি কোরো না বন্ধুরা!’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *