জমজ বোন আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা নিউইয়র্ক অঞ্চলে বাংলাদেশী আমেরিকানদের কাছে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে অনন্য এক উদাহরণে পরিণত হয়েছেন। বরিশাল সদরের এই দু’বোন ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ ছিল না। মায়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হাই স্কুল পেড়িয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। ভার্সিটিতে ব্যবসা-প্রশাসনে ভর্তির পাশাপাশি ইউএস আর্মিতেও ভর্তি হয়েছিলেন। এরফলে তাদের উচ্চ শিক্ষা লাভের ব্যয়-ভার নিয়ে মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে কোন টেনশনে থাকতে হয়নি। এভাবেই বিশেষ কৃতিত্ব সহকারে নিউইয়র্কস্থ খ্যাতনামা ‘সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি’ থেকে গত ১৬ মে আনিকা ও মালিহা মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) কোর্স সম্পন্ন করেছেন অর্থাৎ সেদিন তারা এমবিএর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন। এর পরদিনই তারা একই ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন বর্ণাঢ্য এক সমাবেশের মধ্যদিয়ে। এ সময় এই ভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলী ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ইউএস আর্মির অফিসার হিসেবে এই সনদপ্রাপ্তির ঘটনাটি অন্যদের জন্যে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। চাকরি, ব্যবসার মত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে তথা কোন দেশ কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্র আক্রান্ত হলে তারা নিয়মিত বাহিনীর সাথে রনাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
অনুষ্ঠানটি ছিল বিশেষ এক আমেজে এবং কমিশন্ড অফিসারগনের স্বজনেরাও আমন্ত্রিত ছিলেন। সেকেন্ড লেফট্যানেন্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা এ সংবাদদাতার সাথে কথা প্রসঙ্গে বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্যদিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্যে। আনিকা এবং জেবা বললেন, অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি-কসম্যাটিক্স ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এদুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনক’র অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৫টি হচ্ছে : এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মীট, আর রাজ্জাক সুপার মার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার।
এমবিএ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশনের পরদিন সেকেন্ড ল্যাফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন্ড হবার পরের দিন ১৮ মে ছিল এই জমজ দু’বোনের জন্মদিন। জন্মদিনের অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানটি হলো নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশী বাণিজ্যিক পাড়ায় (৭১১২ ৩৫ এভিনিউ) আর রাজ্জাক সুপার মার্কেটের বেসমেন্টে মনোরম সাজে সজ্জিত ব্যাঙ্কুয়েট হলে।সেখানে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’র তৃতীয় স্তম্ভ হিসেবে আশরাফ আলী খান লিটনকে অর্থাৎ এই কর্পোরেশনের পার্টনার হলেন ৩ জন।
উল্লেখ্য, আনিকা ও মালিহার মা মোর্শেদা বেগম মায়ার সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে বহুজাতিক সমাজে ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ ক্রমান্বয়ে দৃঢ়ভিতের ওপর দাঁড়াচ্ছে বলে সুধীজনের ধারণা। এই কর্পোরেশনের অনলাইন ব্যবসায় মাটির ডিনার সেট ইতিমধ্যেই দেশপ্রেমিক প্রবাসীগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বাংলা নতুন বছরের দিনই শুধু নয়, বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সকল অনুষ্ঠানে এবং সৌখিন প্রবাসীগণের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে মাটির ডিনার সেট। অন্য সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই প্রতিযোগিতার মার্কেটে ক্রমে সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে জানালেন তিন পার্টনার। এক্ষেত্রে তারা প্রবাস প্রজন্মের আন্তরিক সহায়তা কামনা করেছেন বাঙালি কালচারকে লালনের অভিপ্রায়ে। আর এভাবেই নিউইয়র্ক অঞ্চলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত বাংলাদেশী আমেরিকানদের মধ্যে হাজার বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত বাঙালি পরিচিত হচ্ছে অনন্য এক অভিযাত্রায়।