সৌদি প্রবাসীদের আত্মহত্যার হার ২৪%!

২০২৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ওই বছর ৪ হাজার ৮১৩ জন প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেশি। এ তথ্য প্রকাশ করেছে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ)। গতকাল (২৯ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত “প্রবাসে মৃত শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতকরণ” শীর্ষক সংলাপে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, “এতো তরুণ মানুষ কেন মারা যাচ্ছে? সরকারের উচিত প্রতিটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় মৃতদেহে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও মৃত্যুর সনদে তা ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়—যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে মারা যাওয়া প্রবাসী শ্রমিকদের গড় বয়স মাত্র ৩৮ বছর। বিশেষ করে, আরব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রমবাজারনির্ভর দেশগুলোতে কর্মরত নারীদের মৃত্যুর গড় বয়স উন্নত দেশের নারীদের তুলনায় প্রায় ১০ বছর কম। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, প্রবাসী নারীদের মধ্যে ৩২ শতাংশ মৃত্যু ছিল ‘অস্বাভাবিক’। এর মধ্যে রয়েছে দুর্ঘটনা, খুন ও আত্মহত্যা। অধিকাংশই কর্মজীবন শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই মারা গেছেন।

গবেষণায় বলা হয়, মোট মৃত্যুর ৬৯ শতাংশকে ‘স্বাভাবিক’ ও ৩১ শতাংশকে ‘অস্বাভাবিক’ বলা হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ—২৪ শতাংশ। অস্বাভাবিক মৃত্যুর এ চিত্র কেবল শ্রমনির্ভর দেশগুলোতেই পাওয়া যায়। ইউরোপ, আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, প্রায় ৪৮ শতাংশ প্রবাসী পরিবারের সদস্য বিশ্বাস করেন না যে, মৃত্যুর সনদে উল্লেখিত কারণটি প্রকৃত। তারা বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আড়াল করা হয়েছে। সংলাপে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের মরদেহ গ্রহণের সময় মর্যাদাহীন ও অমানবিক আচরণ করা হয়।

মরদেহ সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহেও অনেক জটিলতা পোহাতে হয়—৮০ শতাংশ পরিবার এসব সমস্যা ভোগ করেছেন বলে জানা গেছে। ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, “এত মানুষ কেন মরছেন, বিশেষ করে এত অল্প বয়সে? এর উত্তর আমরা পাচ্ছি না। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও সম্মানজনক ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।”

এই গবেষণাটি প্রবাসীদের জীবন ও মৃত্যুর বাস্তবতা তুলে ধরছে—যারা নিজেদের শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখেন, অথচ মৃত্যুর পরও অধিকাংশ সময় মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হন। এখনই সময় রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে গভীরভাবে ভাবার।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *