‘হামাস নয়, ইসরায়েলি হামলাই ছিল সবচেয়ে বড় আতঙ্ক’—জিম্মি মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভে উপস্থিত হয়ে এমনটাই জানিয়েছেন গাজায় জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া নামা লেভি। চলতি বছর জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলে ফিরেছেন তিনি।
টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া আইডিএফের (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) পাঁচ নারী সেনার মধ্যে নামা লেভি একজন। হামাসের কাছে জিম্মি থাকা বাকিদের মুক্তির দাবিতে তেল আবিব জাদুঘরের সামনে জড়ো হওয়া প্রায় দেড় হাজার মানুষের সামনে তিনি বলেন, জিম্মি থাকার দিনগুলোতে হামাস তাঁর ও বাকি জিম্মিদের প্রাণনাশের হুমকি ছিল না। প্রাণহানির হুমকি ছিল তাঁর নিজের দেশ ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলা। লেভি বলেন, ‘একেকটি হামলা ছিল বিভীষিকা। প্রতিবার হামলার সময় মনে হতো, এটিই শেষ। আর কোনো দিন এই পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারব না!’
লেভি বলেন, ‘কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই চালানো হতো হামলা। হঠাৎ একটা বাঁশির মতো শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। ওই শব্দ শুনলেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। ওই মুহূর্তে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে! প্রার্থনা করতাম যেন আমার ওপর এসে আঘাত না হানে। আর তারপর শোনা যায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ—এতই জোরালো সেই শব্দ যে আগামী কয়েক ঘণ্টার জন্য আপনি প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন। এত জোরে চারপাশ কেঁপে ওঠে যে মনে হয় প্রচণ্ড মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে।’
লেভি জানান, একবার তিনি যে বাড়িতে ছিলেন, ওই বাড়ির ওপর এসে পড়ে একটি ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি যে পাশে ছিলেন, ওই পাশে আঘাত হানেনি সেটি। অল্পের জন্য বেঁচে যান। নামা লেভি বলেন, ‘এমন মুহূর্তে আপনার আসলে কিছুই করার নেই। আপনি দৌড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবেন না। নিজেকে অস্বাভাবিক রকমের দুর্বল মনে হবে। জিম্মিদশায় এটিই ছিল আমার বাস্তবতা।’
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে না খেয়ে থাকতে হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতার কথাও জানান লেভি। তিনি বলেন, ‘এমনও দিন গেছে যখন খাওয়ার কিছুই ছিল না। এমনকি পানিও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। কপালের জোরে সেদিন বৃষ্টি হয়েছিল। আর হামাসের সদস্যরা সেই বৃষ্টির পানি এনে আমাকে দিয়েছিল। ওই পানিটুকুই আমাকে এক বাটি ভাতের মতো শক্তি দিয়েছিল।’
নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে লেভি বলেন, ‘আমি কখনোই ভাবতে পারিনি যে জিম্মিদশায় আমাদের কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তা জানার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে রাখা হবে। প্রথম দফায় জিম্মিমুক্তি ও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে কয়েকজন জিম্মি ফেরত আসার পর তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা জানার পরও আমাদের ফেরত আনার চেষ্টাই করা হয়নি।’
এর আগে চলতি মাসেই আরও এক মুক্তি পাওয়া জিম্মি একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। ওই জিম্মি বলেন, ‘আমাদের ভয় ছিল হামাস নয়, ইসরায়েলই আমাদের হত্যা করবে। আর তারপর বলবে, হামাস আমাদের হত্যা করেছে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। জিম্মি করে নিয়ে আসে ২৫১ জনকে। যাঁদের মধ্যে ৫৮ জন এখনো হামাসের কাছে জিম্মি রয়েছেন।