রাজনৈতিক বিদ্বেষী মনোভাব চরম আকার ধারণের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা চলতে থাকায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন (৪২%) আমেরিকানই দ্বৈত-নাগরিকত্ব গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছেন বলে ২৪ মে প্রকাশিত এক জরিপ রিপোর্টে উদঘাটিত হয়েছে। আমেরিকানদের মনোভাব, আচরণ এবং বদলে যাওয়া নিয়ে গবেষণারত শিকাগোভিত্তিক ‘দ্য হ্যারিস পোল’ পরিচালিত এ জরিপে অংশগ্রহণকারিগণের মধ্যে ২৮ বছরের কম বয়েসী অর্থাৎ ‘জেনারেশন জি’র ৬৩% জানিয়েছেন যে তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতায় অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। কর্মসংস্থান এবং উপার্জিত আয়ের সাথে দৈনন্দিন জীবন-যাপনে যে ব্যবধান তৈরী হয়েছে তা চিরচেনা আমেরিকার সাথে মিলছে না। একই মনোভাব পোষণ করেছেন ২৯ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যেকার বয়েসী আমেরিকানের ৫২%। তারা স্বপ্নের ভবিষ্যত রচনায় উপযোগী রাষ্ট্র হিসেবে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, ফ্রাঞ্চ, ইটালি, জাপান, মেক্সিকো, স্পেন, জার্মানী অথবা নিউজিল্যান্ডকে বেছে নিতে চান। কারণ, বর্তমান সময়ের ইতিহাসের সাথে আমেরিকান স্বপ্ন আর মানাচ্ছে না। তা মরিচিকায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। জীবন-যাপনে টানাপোড়েন হ্রাস পাওয়া দূরের কথা, ক্রমান্বয়ে তা চরমে উঠছে।
এই জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থার পরিচালক টিম ঐসিকি বলেছেন, যারা অভিবাসন মর্যাদায় আমেরিকায় বসতি গড়েছেন অথবা বিপুল অর্থবিত্ত রয়েছে কিংবা বিদেশে ধনী আত্মীয়-স্বজন রয়েছে-এমন প্রবীন আমেরিকানরাই সচরাচর দ্বৈত-নাগরিকত্ব গ্রহণ করে আসছিলেন এবং এটাই ছিল স্বাভাবিক। আর এখোন দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবারের উঠতি বয়েসীদের মধ্যে, বিশেষ করে যারা নিজের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চিয়তায় নিপতিতম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এ বয়েসীরা কোনভাবেই নিরাপদ ভবিষ্যতের পরিপূরক ভাবতে পারছেন না।
টিম ঐসিকির মতে যুব সমাজের মধ্যে নিজের প্রত্যাশিত ভবিষ্যতের ব্যাপারে হতাশা বেড়েছে। কারণ, উপার্জিত আয়ে দৈনন্দিন জীবন-যাপনে টানাপোড়েনের কারণে অনেকেরই বাড়ির মালিক হবার স্বপ্ন ফ্যাকাসে হয়ে পড়েছে। সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতাও প্রতিনিয়ত ধর্ব/হুমকিতে পড়ছে। তাই মরিচিকা ধরা আমেরিকান স্বপ্নের সেই ঐতিহ্যকে আর উদ্ভাসিত করার কথা তারা ভাবতেও পারছেন না। তারা প্রযুক্তির সুবাদে গোটাবিশ্ব যে একটি রাষ্ট্রে পরিণত হবার অবস্থায় এসেছে তাকে কাজে লাগিয়ে যেখানে বসবাস করলে স্বপ্নের উজ্জ্বল ও নিরাপদ ভবিষ্যত রচনাকে সহজ ভাবছে-সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। টিম ঐসিকির পর্যবেক্ষণে আরো জানা গেছে, মেধাবি ও কর্মক্ষম যুবসমাজের মধ্যে দ্বৈত-নাগরিকত্ব গ্রহণকে বিলাসিতা মনে হচ্ছে না। এটাকে যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো উপার্জনের একটি অবলম্বন, স্বাস্থ্য-চিকিৎসায় অধিকতর উপযোগী, স্বাচ্ছন্দে দিনাতিপাতের সহায়ক, চালচলনে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করা সম্ভব বলে তারা বিবেচনা করছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে সারা আমেরিকায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে পরিচালিত এ জরিপের পর্যালোচনার পর প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী : জীবন-যাত্রার ব্যয় বেড়েছে বলে মনে করছেন ৪৯%, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৪৮% এবং উচ্চমানের জীবন-যাপনে আগ্রহীগণের ৪৩% দ্বৈত-নাগরিকত্ব গ্রহণকে সঠিক বলে বিবেচনা করছেন। এমনকি ধনী আমেরিকানরাও সামাজিক অস্থিরতার কারণে জীবনের শেষ দিনগুলো নিরাপদে অতিবাহিত করার জন্যে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
অন্যদেশে বসতি গড়তে আগ্রহী তথা সিটিজেনশিপ গ্রহণে আগ্রহী আমেরিকানদের সার্বিক সহযোগিতাকারি সংস্থা ‘হেনলী অ্যান্ড পার্টনারস’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের আবেদন বেড়েছে ৩৯%। মূলত: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে অভিষিক্ত হবার পরই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের আগ্রহ বাড়ছে আমেরিকানদের মধ্যে। এর মধ্যে ধনী আমেরিকানের সংখ্যাই বেশী। হেনলী অ্যান্ড পার্টনারস’র মাধ্যমে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে তুরস্ক, ভারত, যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগের আবেদন আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৩০%।
বিদেশে বিনিয়োগ এবং সিটিজেনশিপ গ্রহণে সহযোগিতাকারি একইধরনের সংস্থা ‘ল্যাটিট্যুড গ্রুপ’ এবং ‘অ্যারটন ক্যাপিটল’র পক্ষ থেকেই দ্বৈত-নাগরিকত্ব গ্রহণের আবেদন ৪০% বৃদ্ধির তথ্য জানা গেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরিজীবীদের আয়ের ওপর ট্যাক্স আরোপের হার বৃদ্ধির ব্যাপারটিকেও কঠোর পরিশ্রমীরা বিশেষ এক যন্ত্রণা হিসেবে মনে করছেন।হেনলী অ্যান্ড পার্টনারস’র তথ্য অনুযায়ী অবসরগ্রহণকারি ধনী আমেরিকানের অনেকেই উইরোপ, ক্যারিবিয়ান, সাউথ প্যাসিফিক-কে শেষ গন্তব্য হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।